টাকা দ্বিগুণ করার নিরাপদ কিছু বিনিয়োগের মাধ্যম

  • Post author:
  • Post category:Business

গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,  ‘আয় থাকতে আখে চল, বেল থাকতে হেটে চল’ – এর মানে হচ্ছে আপনি যখন সম্পদ আছে বা টাকা আছে,  তখন আপনার এ সম্পদ কিভাবে বৃদ্ধি পায় এ বিষয়টি ভাবতে হবে, সম্পদ বাটাকা জিনিস কিন্তু কখনোই চিরস্থায়ী না । টাকা ইনকামের থেকে ম্যানেজ করে টাকা বাড়ানো কিন্তু খুব কঠিন । আপনারা যারা বড়লোক বা ভবিষ্যতে বড়লোক হতে যাচ্ছেন বা যারা নতুন ইনকাম শুরু করেছেন, তাদের জন্য আমি আজকে কিছু সঠিক পথের কথা বলব, যেখানে আপনি অনেকটা নিরাপদে বিনিয়োগ করে আপনার টাকাটা সব সময় বাড়াতে পারেন ।

এক নাম্বার পথ –  ভাড়া দিতে পারবেন এমন কিছুতে বিনিয়োগ করুন

ভাড়া জিনিসটা আমাদের সমাজে বহুদিন থেকে প্রচলিত আছে ।  যারা শহরে থাকেন, বেশিরভাগ মানুষই বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন,  আবার রাজশাহীর মত শহরে প্রচুর ছাত্রাবাস আছে, ছাত্রাবাসে ইনভেস্টমেন্ট করে বহু লোক বসে থেকে টাকা ইনকাম করেন । দোকান কিনে ভাড়া দিতে পারেন । আমার মতে এই ক্যাটাগরিতে সবচাইতে নিরাপদ এবং ভালো ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে অ্যাপার্টমেন্ট  কিনে ভাড়া দেওয়া । মোটামুটি ভালো একটা পজিশনে অ্যাপার্টমেন্ট কিনে রাখলে আপনার ভাড়ার কখনোই অভাব হবে না এবং ভাড়ার পরিমাণ বছরে বছরে বৃদ্ধি পায়, পৃথিবীর কোথাও কমেনা । আবার অনেকে আছেন যারা commercial-properties এ আগ্রহী অর্থাৎ আপনি দোকান কিনে দোকান ভাড়া দিয়ে দিতে পারেন । এগুলো হচ্ছে solid ইনভেস্টমেন্ট, এর কখনো মার নাই । একটা টিপস দেই,  কখনোই ব্যাংকের সেভিং একাউন্টে টাকা বসে রাখবেন না এটা টোটাল লস প্রজেক্ট । তবে যখনই কোনো প্রপার্টি কিনতে যাবেন সব সময় কাগজপত্র চেক করবেন, প্রফেশনাল মানুষ দ্বারা কাগজপত্র যাচাই করবেন এবং ঠকবেন না এটা নিশ্চিত হয়ে প্রপার্টি টা  কিনে রাখবেন । আপনার যদি দুইটা বা তিনটা অ্যাপার্টমেন্ট থাকে, সেটা যে এলাকায় হোক না কেন, জেলা শহরে বা ঢাকা শহরে – আপনি প্রতিমাসে অনায়াসে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘরে বসে থেকে পাবেন এবং এর পেছনে আপনার এক টাকাও মেইনটেনেন্স খরচ করতে হবে না । এর থেকে সহজ ইনভেস্টমেন্ট পথ আর কোন টা আছে? আবার ভবিষ্যতে যদি এই অ্যাপার্টমেন্ট আপনি বিক্রি করতে চান, ধরুন আপনি যদি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন ।  পাঁচ বছর পর অনায়াসে সে অ্যাপার্টমেন্ট  ৬০ লাখ টাকার আশেপাশে বিক্রি করতে পারবেন, অ্যাপার্টমেন্ট ভ্যালু প্রত্যেক বছরে ৩ থেকে ৬ শতাংশ বাড়ে, কখনোই কমেনা । আমি নিজে অনলাইনে জগতে আছি, আপনারা যারা অনলাইন জগত থেকে ভালো টাকা ইনকাম করেন, তাদের জন্য একটা সৎ পরামর্শ এবং ফ্রী – আপনার টাকা উরাধুরা জিনিসের পিছনে খরচ না করে, যে বুদ্ধি তা দিলাম, যদি এই বুদ্ধি ফলো করে সাবধানে ইনভেস্ট করুন । এটা আপনার জন্য সাদকাতুল জারিয়া হিসেবে কাজ করবে । কোন প্রকার আলাদা পরিশ্রম ছাড়াই আপনি প্রত্যেক মাসে ঘরে বসে থেকে টাকা আয় করতে পারবেন । টাকা ইনকাম করার পর কখনই ভাববেন না যে এই টাকা আপনি জাস্ট অযথা জিনিসের পেছনে খরচ করবেন । বরং এটা ভবুন, এই টাকাটা ইনভেস্ট করে, আপনার অন্য খরচ করার অপশন এ টাকা থেকে বের হয়ে আসে । বেশিদিন বড়লোক থাকার এটা সবচাইতে ভাল পদ্ধতি । আরেকটা সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, অ্যাপার্টমেন্ট কিনলে আপনি প্রায় সাথে সাথে আপনার  ইনভেস্ট থেকে লাভটা  পাবেন । জমি বা অন্য বিষয়গুলো, এগুলো আপনি যখন বিক্রি করবেন, তারপরে লাভ পাবেন । রেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট যেগুলো আছে, এগুলোতে আপনার আয়টা প্রায় সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় । সিদ্ধান্ত আপনার, তবে যা কিছুই করবেন, অনেক ভেবেচিন্তে, যাচাই-বাছাই করে তারপর ইনভেস্ট করবেন ।

Better watch the video on YouTube

সোনা বা  রুপা কিনে রাখুন

অবাক হওয়ার কিছু নাই, সৃষ্টির শুরু থেকে সোনা রুপা আছে এবং সৃষ্টির শুরু থেকেই সোনা বা রুপার দাম প্রত্যেকদিন বাড়ে আর আমাদের দেশে যে কোন জিনিসের দাম বাড়ে বৈ কমে না । আমি অন্য একটা আর্টিকেলে কাজ করছি, এটার টাইটেল হচ্ছে – ‘বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সবসময় বাড়ে, কমে না কেন?’ । যাইহোক, সোনার বার কিনে রাখলে এখানে আপনি লাভ পাবেন এর সম্ভাবনা হান্ডেট পার্সেন্ট । আবার সিলভার বারও কিনে রাখতে পারেন, এখানেও লাভের সম্ভাবনা অনেকটাই হান্ডেট পার্সেন্ট । বিগত ৪০ বছরে সোনার দাম কত বেড়েছে জানেন?  মাত্র ৩৩২ গুণ!!! ১৯৭১ সালে এক ভরি সোনার দাম ছিল ১৭০ টাকা, এই কিছুদিন আগে, ২০১১ সালে সোনার দাম এক ভরিতে ছিল ৪৫,০০০ টাকা । এখন ২০২১ সালের ১৬ ই অক্টোবর, আজকে এক ভরি সোনার দাম ৬৯ হাজার টাকার বেশি । বর্তমানে ২২ ক্যারেটের ১ ভরি সোনার দাম ৭১ হাজার টাকার আশেপাশে । এই কারণে আমি আপনাকে সাজেশন দেব, আপনার যদি টাকা থাকে তাহলে আপনি সোনার বার কিনে রাখেন । যখন দেখবেন বাজারে সোনার দাম বেড়ে গেছে বা আপনার প্রয়োজন হবে, দাম বাড়ার সাথে সাথে আপনি এটা বিক্রি করে দিয়ে লাভ করতে পারেন ।

ব্যবসা শুরু করতে পারেন

ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্যবসা একটু ভয় পাই, যদিও আমার অনলাইন ব্যবসা আছে । তবে অফলাইন ব্যবসা, এটা আমার কাছে অনেক জটিল মনে হয় । আপনারা অনেকে আছেন, যাদের মধ্যে ব্যবসায়ীক গুণাবলী আছে, যদি আপনি মনে করেন আপনার টাকা আছে এবং আপনার ব্যবসার আইডিয়া আছে, তাহলে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন । তবে মনে রাখবেন, চাকরির থেকে ব্যবসা করা কিন্তু অনেক জটিল । এখানে আপনাকে একসাথে অনেকগুলো চাকরি করতে হবে এবং প্রথম এক-দুই বছর এখান থেকে আপনি এক টাকাও পাবেন না । তবে, আপনার ব্যবসা যদি টিকে যায়, তখন ভালো একটা লাভ পাবেন এবং এই লাভটা দীর্ঘদিন থাকবে, যতদিন আপনার ব্যবসা টিকে থাকবে ।

ridigital Media How to Invest your Money Bangla Blog

জমি কিনে রাখেন

আমার বাবা সবসময় বুদ্ধি দেয়, যখনই তোমার টাকা থাকবে, তুমি জমি কিনে রাখবে । জমি জিনিসটা আজীবন-আমরণ, এর ভ্যালু কখনই কমবে না এবং কোনো কালেই আপনি ঠকবেন না । সম্ভাবনা খুবই কম । তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন, যেখানেই জমি কিনবেন, চেষ্টা করবেন জনতা যেন রাস্তা আশেপাশে হয়,  যেখানে ভবিষ্যতে অনেক কিছু হতে পারে । আমি যে এলাকায় থাকি, 15 বছর আগে এখানে রাখালরা গরু চরাতো, এক কাঠা জমির দাম ছিল সম্ভবত ৫০,০০০ এর আশেপাশে, এখনো এক কাঠা জমির দাম ৫০ তবে সেটা হাজার না ৫০ লাখের আশেপাশে । চিন্তা করছেন এই জমির ভ্যালু টা কত হাজার পারসেন্ট বেড়ে গেছে! । যদি আমি ওই সময় এখানে জমি কিনে রাখতাম, (কথার কথা) তাহলে এখন আমি অনায়াসেই কোটিপতি হয়ে যেতাম!! । জমি জিনিসটাই এরকমই । আপনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে আপনার কেনা জমি আপনাকে সহজেই বড়লোক বানায় দিতে পারে । এটা সবচেয়ে সলিড ইনভেস্টমেন্ট এবং এই ইনভেস্টমেন্টে রিস্কের পরিমাণ খুবই কম । তবে যেটা আমি সবসময় বলি, আপনি যখনই কোনো কিছু কিনবেন, যাচাই-বাছাই করে, প্রফেশনাল দ্বারা ভেরিফিকেশন করে, তারপরে সিদ্ধান্ত নেবেন । হঠাৎ করে কখনোই সিদ্ধান্ত নিবেন না ।

এক্সট্রা টিপস

আমাদের প্রায় সবারই ব্যাংকের সেভিং অ্যাকাউন্ট আছে । আপনি কি জানেন, সেভিং একাউন্টে টাকা রাখা টোটালি লস প্রজেক্ট?  বলছি না, আপনি টাকা নিয়ে আসে তোষকের নিচে রাখেন । আমি বলতেছি আপনার ঐ টাকাটা আপনি উপরের যে কোন একটা উপায়ে ইনভেস্ট করেন । টাকা ব্যাংকে রাখলে আপনি কোন লাভ-ই পান না বা যতটুকু লাভ পান, সেটাও বলার মতো না । প্লাস, এটা সুদের পর্যায়ে পড়ে । সুদ ছাড়া বর্তমান অর্থনীতি অনেকটাই অচল, তবে ধর্মীয়  দৃষ্টিতে এটা কখনোই যায়েজ না । এ কারণে উপরে যে ইনভেস্টের পথ গুলোর কথা বললাম এগুলো কিন্তু ধর্মীয় গত ভাবে, সামাজিক গতভাবে, জায়েজ এবং এগুলো লংটাইম আপনাকে সুফল দেবে । সুতারাং টাকা উরাধুরা অযথা বিলাসী খরচ না করে, টাকা ইনভেস্ট করুন । তারপর ওই ইনভেস্টমেন্টের আয় থেকে আপনার জীবনের বিলাসী খরচগুলো করুন, সমস্যা নাই ।