স্কুইড গেইম: কেন এটা এতো জনপ্রিয়, রিভিউ

মনে আছে গ্যাংনাম স্টাইলের কথা? ২০১২ সালে এই গান অনেকটা ধূমকেতুর মতো ইউটিউবে আবির্ভাব হয়েছিল এবং সারা বিশ্ব  কাঁপিয়ে দিয়েছিল । স্কুইড গেম নাম শোনার পর মনে হবে এটা বোধহয় স্পন্জ ববের পেট্রিক এবং স্কুইড, আসলে এটা একটা কোরিয়ান টিভি সিরিজ যেটা এখন নেটফ্লিক্স কাঁপিয়ে দিচ্ছে, সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ সিরিজটি মুক্তি পেয়েছে । এক লাইনে বললে, এটা কোরিয়ান স্টাইলের surviving সিরিজ । এই সিরিজে নিজে বেঁচে থাকার জন্য একজন সাধারন মানুষ কিভাবে ভয়ঙ্কর খুনি হয়ে উঠতে পারে তার একটা জ্বলন্ত প্রমাণ । আমি গতরাতে শেষ করলাম, অসাধারন একটা টিভি সিরিজ । প্রথমত আপনার যদি দেখে না থাকেন তবে প্রথমে স্কুইড গেইম দেখেন, তারপরে এই রিভিউটা পড়েন । 

ridigital Media Why Netflix Squid Game is so Popular
Squid Game Poster

স্কুইড কিমের থিম হচ্ছে এটা আপনার ছেলেবেলার খেলানো গেমগুলোর একটা রিপিট, যেখানে আপনি যদি জিতে যান তাহলে 45 বিলিয়ন কোরিয়ান টাকা পুরস্কার হিসেবে থাকবে! । এই গেমে মূলত যে সকল লোক অভাবের তাড়নায় দিশেহারা, তাদেরকে টার্গেট করে গেম এ নিয়ে আসা হয় এবং বাচ্চা বেলার গেমের সাথে এটার পার্থক্য হচ্ছে ছোটবেলায় খেলায় হারলে আপনার তেমন কিছুই হতো না । এখানে যদি আপনি কোন কোন কারণে হেরে যান, সাথে সাথে আপনার জীবনটা চলে যাবেন । সেটা নিশ্চিত গেমাররা শুরুতে জানতো না । মূলত ৪৫৬ জনের মধ্যে একজন বাদে সবাই টাকার লোভে গেম খেলতে আসে । সে একজন হচ্ছে ০০১, তার সম্পর্কে আমি আলাদা একটা ভিডিও বানাবো, আজকে আমরা মূল সিরিজ সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা দিব ।

‘গী হোন’ হচ্ছে এই সিরিজের মূল চরিত্র, যে মূলত প্রচুর অভাব এর মধ্যে আছে । সে তার মায়ের সাথে বসবাস করে, মা স্টিল তাকে সাপোর্ট দেয় । তার বউ তাকে ছেড়ে চলে গেছে, ‘গী হোন’ তার মেয়ের সাথে সপ্তাহে একবার দেখা করতে পারে । যদি টাকার সাপোর্ট মেয়েকে না দিতে পারে, একটা সময় সে তার মেয়েকেও হারিয়ে ফেলবে । এইরকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ‘গী হোন’ এর যেটা দরকার, তা হচ্ছে মিরাকল যার মাধ্যমে সে তার সমস্ত অভাব থেকে মুক্তি পাবে ।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে সঙ্গী হন এই গেমের এর অফার পায় । আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো টাকার অফার শুনে সে এই গেমটা কে রিফিউজ করতে পারেনা । তার মতো ৪৫৫ জন অন্যান্য গেমাররাও একই কারণে এই গেমে আসে এবং প্রায় সবাই টাকার লোভে এই গেমে প্রবেশ করে । যেটা তারা জানত না, ইনোসেন্ট এই চিল্ড্রেন গেমে যদি কেউ হারে, সাথে সাথে তাদেরকে মেরে ফেলা দেয়া হবে । প্রায় সব গেমার নিজেদের ইচ্ছাতেই এখানে আসে । এসে তারা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, যেখানে সব গার্ড মাস্ক পড়ে থাকে । তাদের থাকার জায়গা টা অদ্ভুত, জেলখানার মতো নিয়ম কানুন ফলো করতে হয় এবং যতক্ষণ গেম শুরু না হয়, ততক্ষণ তারা বুঝতে পারে না আসলে পরিস্থিতি কত ভয়ংকর হতে পারে । জীবনের টাকার সমস্যা সমাধান করতে এসে প্রায় সবাইকে নিজেদের জীবন হারাতে হবে এখানে । 

পড়তে ভালো লাগে না? এটার ভিডিও রিভিউ দেখুন

প্রথম গেম ‘রেড লাইট গ্রীন লাইট’ এ অনেককে মেরে ফেলা হয় কারণ যখন রেডলাইট হবে, তখন যদি কেউ একবিন্দুও নড়াচড়া করে, সাথে সাথে তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হয় । ‘রেড লাইট গ্রীন লাইট’ এর পরে সবাই পাগলের মত হয়ে যায় কিন্তু তারপরও তাদের বাস্তব পরিস্থিতি এত ভয়ংকর যে তারা যখন গেম এর বিপক্ষে ভোট দিতে যায় তখন একটা ভোটের কারণে গেমটা আবার চালু থাকে অর্থাৎ গেমের শর্ত হচ্ছে যদি ম্যাক্সিমাম প্লেয়ার গেম খেলতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তারা গেম বাতিল করতে বাধ্য হবে । শুরুতে যেটা বলছিলাম, ৪৫৬ জনের মধ্যে একজন শুধু টাকার লোভে এই গেম খেলছে না, শেষ পর্যন্ত তারা ভোটেই নির্ধারিত হয় গেমটি আবার চালু থাকবে ।

৯ এপিসোডের সিরিজের প্রথম দিকে একটু বিরক্ত লাগতে পারে । তবে দ্বিতীয় এপিসোড থেকে আস্তে আস্তে আপনি সিরিজটার সাথে এডিক্টেট হয়ে যাবেন । প্রত্যেকটা এপিসোডে গেম খেলা হয় এবং প্রত্যেকটা গেমের মধ্যে নতুন নতুন ক্যারেক্টার ডেভলপ হয়েছে । ক্যারেক্টারগুলো এমনভাবে অভিনয় করেছে, যে মাঝে মাঝে আপনার মনে হতে পারে আপনি নিজেই বোধহয় ক্যারেক্টারগুলো সাথে গেম খেলতেছেন । সিরিজের মূল ক্যারেক্টার ‘‘গী হোন’, তার বন্ধু ‘সু স্যাং হু’ গেমের শেষ পর্ব পর্যন্ত টিকে থাকে । সিরিজের মধ্যে ক্যারেক্টারগুলো সব সময় মারা যেতে থাকে । তবে ক্যারেক্টারগুলোর মারা যাওয়ার থেকেও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কিভাবে তাদেরকে কিভাবে মারা হচ্ছে, আপনি প্রায় সবসময় টেনশনে অস্থির থাকবেন । যে ৬ টি গেম এখানে খেলা হয়, প্রথমটা হচ্ছে – ‘রেডলাইট গ্রীনলাইট’ তারপরে হচ্ছে ‘হানিকম্ব’, Tug of War, মার্বেল খেলা,  গ্লাসের উপর দিয়ে হাঁটা এবং সর্বশেষ গেম হচ্ছে সিরিজের টাইটেল ‘স্কুইড গেম’ । আমার কাছে এই গেমগুলোর মধ্যে সবচাইতে জটিল মনে হয়েছে গ্লাসের উপর দিয়ে হাঁটা, এই পর্বটা ভয়ানক উত্তেজনাকর ছিল । সম্পূর্ণ  সিরিজে  আপনার সব সময় মনে হবে, এই যে মাস্ক পড়া – এই লোক গুলো কারা, কেনই বা তারা এ গেম খেলাচ্ছে, এই গেমের মাধ্যমে তাদের লাভ কি । শেষের দিকের পর্বে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর পাবেন । 

 এই সিরিজে যেটা তুলে ধরা হয়েছে সেটা হচ্ছে, অভাবগ্রস্ত কিছু মানুষ তাদের নিজের জীবনে টিকে থাকার জন্য ভয়ঙ্কর কত রকমের কাজ করতে পারে । পুরো সিরিজটা অনেকটা ভয়ঙ্কর কারণ প্রচুর মানুষের মৃত্যু আপনি দেখবেন । কিছু কিছু পর্বে মানুষের অর্গান বের করার দৃশ্য আছে এবং সেগুলো বিক্রি করার মাধ্যমে তারা লাভ করে । শেষ পর্যন্ত সবাই মারা যায়, শুধু আমাদের নায়ক বেঁচে থাকে । তবে যেটা সমস্যা হচ্ছে এতকিছু করার পর যখন সে টাকা পায়, সে টাকার মধ্যে কোনো আনন্দ পায় না । এখানে যেটা বোঝানো হয়েছে, আপনি টাকার জন্য এত কিছু করছেন । তারপর টাকাটা পেলেও আপনার মনে কখনোই শান্তি আসবেনা । এই সিরিজটি নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ । এর জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে আমরা ছোট বেলায় খেলার ছলে যে গেম গুলো খেলে থাকি, বাস্তব জীবনে সেই গেম গুলোর জন্য শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে কারন তাদের অভাব, তাদের দারিদ্রতা তাদেরকে এই মরণ গেম খেলতে বাধ্য করছে । জীবনের সংগ্রাম এই সিরিজে তুলে ধরা হয়েছে । যখন আমরা ছোট বেলা এই খেলাগুলো খেলি, তখন আমাদের মধ্যে জীবনের কষ্টকর অধ্যায়গুলো থাকেনা, নিছক আনন্দের বসে এই খেলা গুলো খেলে থাকি । যখন আমরা বড় হই, জীবন সংগ্রামের কারণে এই ধরনের জীবন মরণ গেম খেলতে হয় । এই কারণে ‘গী হোন’ গেমটা  যে তার পরেও তার মাঝে কোনো আনন্দ থাকে না । যেটা থাকে তা হচ্ছে, ভয়, আতঙ্ক, বিষাদ, এ যেন একটা খেলা জিতেও হেরে যাওয়া । 

শেষের দিকে নায়ক খারাপ মনের এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । এই মানুষগুলো নিজেদের বিরক্তিকর জীবনে আনন্দ নিয়ে আসার জন্য এই মরণ খেলাটা খেলে থাকে ।  খুব সম্ভব এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজন খুব দ্রুত নেটফ্লিক্স আবার আসবে । 

এটা ঠিক রিভিউ না, অনেকটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।