আইফোন ১৩ – এটা কি আপনার কেনা উচিত?

অ্যাপলের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি এমন, তারা যখন নতুন কোন স্মার্টফোন আপডেট আনে, তারা চায় কাস্টমাররা পুরাতন স্মার্টফোন ফেলে দিয়ে নতুন স্মার্টফোন টা সবাই কিনুক! । ২৪শে সেপ্টেম্বর অ্যাপল আইফোন ১৩ মার্কেটে এসেছে,  আজকে আমরা আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব, আইফোন ১৩ তে আসলে কি আছে, এটা আসলে আইফোন ১২ থেকে কতটা বেটার এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আসলেই আপনার আইফোন ১৩ এটা কি কেনা উচিত কিনা! । দেশের বাজারে আইফোন ১৩ এর বাজার মূল্য ‍এক লাখ দশ হাজারের আশেপাশে! । এত দাম দিয়ে ফোন কেনার আগে জেনে নেওয়া উচিৎ আসলেই এই ফোন কি আছে ।

প্রথম দেখা

অ্যাপেল এর স্মার্টফোন সিরিজে আইফোন ১৩ এটা কিন্তু গেম চেঞ্জার টাইপের ফোন না । নতুন নতুন ইনোভেশন যেটা  অ্যাপল স্মার্টফোন আপডেট এর একটা বড় কারণ । স্টিভ জবসের সময় যেটা  সব সময় থাকত এখন কিন্তু আগের মতো সেই রকম ইনোভেশন নাই । অ্যাপল ১৩র এ ভার্সনে বলার মতো যে উন্নতিটা হয়েছে –   ব্যাটারি লাইফ আগের থেকে বেটার হয়েছে, পাওয়ারফুল প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে এবং ক্যামেরার ডিজাইন টা আগের চেয়ে অনেক ভালো করেছে, হার্ডওয়ার দিক থেকে  অ্যাপল ১২ এর তুলনায় তেমন কোনো পরিবর্তন না আসলেও সফটওয়ারের দিক থেকে যথেষ্ট আপডেট করা হয়েছে  ।

শর্ট রিভিউ

আইফোন ১৩ খুব বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসে নি বাট কিছু জিনিস ইমপ্রুভ করেছে । প্রধানত ব্যাটারি লাইফ, প্রসেসর পাওয়ার, ডিসপ্লে এবং ক্যামেরা এই চেঞ্জ গুলার কারণে আইফোন এর সব স্মার্ট ফোনের মধ্যে অ্যাপল ১৩ কে বেস্ট মনে করা হচ্ছে । 

কাগজে-কলমে আইফোন ১৩ কে একচুয়ালি আইফোন ১২S ও বলা যেত । মূলত মার্কেটিং কারণে  অ্যাপল  এটাকে ১২S এর ঘোষণা করেনি বরং এটা একটা নতুন স্মার্টফোন হিসেবে তারা বাজারে নিয়ে আসছে । আইফোন ১৩ ডিজাইন আইফোন ১২ এর অনেকটাই কাছাকাছি, টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন ও তেমন একটা  আলাদা না এবং চোখ কপালে তোলার মতো তেমন কোনো নতুন ফিচারও আইফোন ১৩ তে নাই । তবে এটা বলতে হবে আইফোনের অতীতের সবগুলো সিরিজের থেকে আইফোন ১৩ কিছুটা হলেও বেটার এবং বিশেষ করে কিছু কিছু জায়গায় আইফোন ১৩-র উন্নতি করা হয়েছে ।

ফটো ক্রেডিট – GSMArena

ব্যাটারি লাইফ

 আইফোন ১৩ তে সবচেয়ে বড় যেটা ইম্প্রুভ করা হয়েছে সেটা হচ্ছে ব্যাটারি লাইফ । আগের আইফোন গুলোতে অতটা স্ট্রং ব্যাটারি লাইফ কখনোই ছিল না, প্রায় প্রত্যেক দিনে আইফোনে আপনাদের চার্জ দিতে হতো! ।  আইফোন ১৩ তে অন্তত ২৪ ঘন্টা চার্জ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । ব্যাটারি রিভিউ বিস্তারিত দেওয়া যাবে ডিভাইসটি কিছুদিন ব্যবহারের পর ।

প্রসেসর

 অ্যাপল ১৩ তে ব্যবহার করা হয়েছে A15 বায়োনিক প্রসেসর । এই প্রসেসর অ্যাপলের আগের স্মার্টফোনগুলোর থেকে অনেক বেশি পাওয়ারফুল এবং ৪ জিবি RAM এর সাথে কম্বাইন্ড হয়ে অনেক দ্রুত কাজ করবে । আপনি মাল্টিপল অ্যাপস একসাথে চালাতে পারবেন এবং কোন প্রকার ল্যাগ কখনোই করবেনা । গেমিং এর জন্য আইফোন ১৩ অনেক বেটার একটা  অপশন ।

ক্যামেরা

আইফোন ১৩-র ক্যামেরা আইফোন ১২-র থেকে আহমরি ভাবে তেমন একটা আলাদা না । তবে একেবারেই তেমন কোন আপডেট হয়নি এটাও ঠিক না । সফটওয়্যার এর দিক থেকে অনেক আপডেট হয়েছে, স্পেশালি আপনারা যারা খুব দ্রুত ফটো তুলতে চান, এ ফটোগুলো আর ব্লার হবে না, এগুলো অনেক ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হবে । আইফোন ১৩ তে থাকছে ১২ মেগাপিক্সেল এর ওয়াইড ক্যামেরা (f/1.6) এবং ১২ মেগাপিক্সেল এর আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা (f/2.4) । লং ডিস্টেন্স ফটো তোলার জন্য টেলি ফটোসিস্টেম আইফোন ১৩ তে নাই, ডিজিটাল জুম করে এই টাইপের ফটোগুলো তুলতে হবে । কাছের ফটো তোলার জন্য এটি একটি ম্যাগনিফিসেন্ট ক্যামেরা । মেইন ক্যামেরা 1.7µm pixels ব্যবহার করে ফটো তুলে, যা  আপনার ফটোকে অনেক বেটার কোয়ালিটি দেবে ।

ডিসপ্লে

আইফোন ১৩-র টাচ আগের আগের ফোনগুলোর থেকে অনেক বেটার ।  বিশেষ করে আপনি যদি আইফোন XS বা আরো পুরাতন ফোন থেকে আইফোন ১৩ তে আপডেট করেন । আইফোন ১৩ তে ওএলইডি টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে আপনি অনেক brighter স্ক্রীন পাবেন এবং পিকচার কোয়ালিটি simply ফ্যান্টাস্টিক। তবে হতাশার বিষয় হচ্ছে, এই ফোনে ১২0Hz রিফ্রেশ রেট ব্যবহার করা হয়নি, এ কারণে আইফোন ১৩ প্রো বা আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স এর মত এক্সপেরিয়েন্স এটাতে পাবেন না ।

আইফোন ১২ তে ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ ছিল,  সুখবর হচ্ছে আইফোন 1৩ তে আপল ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজে আপগ্রেড করেছে । যেটা এই ফোনের জন্য যথেষ্ঠ, যদিও অ্যান্ড্রয়েডে এটা খুবই স্বাভাবিক,  তবে আইফোন এর ক্ষেত্রে এটা অনেক বড় একটা ইমপ্রুভমেন্ট ।

দাম এবং রিলিজ  তারিখ

আইফোন এর নাম শুনলেই হারকাপানো দাম মনে পড়ে! এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী কিছু হয় নাই । আমেরিকান মার্কেটে আইফোন ১৩ এর দাম রাখা হয়েছে 799 ডলার , সরাসরি টাকায় কনভার্ট করলে এটা হবে – ৭১ হাজার টাকার আশেপাশে,  তবে ভ্যাট-ট্যাক্স এসব দিয়ে বাংলাদেশের মার্কেটে এর দাম এক লাখ দশ হাজার টাকার কাছাকাছি ।

আইফোন ১৩ কি কেনা উচিত?

এটা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপরে । যেমন আপনি যদি এক্কেবারে নতুন আইফোন ব্যবহারকারী  হন, তবে আইফোন ১৩ নিতে কোন সমস্যা নাই । আইফোন একটা ব্রান্ড, আপনি মুভিতে দেখবেন, নাটকে দেখবেন, সবাই আইফোন এর পেছনের অর্ধেক কামড়ানো আপেল ধরে রাখছে, কেন জানি  সবাই পিছন দিক থেকে ছবি তোলে, ভেতরে কি করছে এটা দেখায় না! আইফোনের এই উচ্চ  দামের একটা বড় কারণ হচ্ছে ব্রান্ড  ভ্যালু । একারণে নতুন ইউজারদের জন্য আইফোন ১৩ অনেক ভালো একটা ফোন আমার মতে, নিতে কোন সমস্যা নেই । 

তবে বর্তমানে যদি আপনার আইফোন ১২ যদি থাকে, তাহলে এই ফোন নেওয়ার কোন দরকার নাই । আইফোন ১২ আর আইফোন ১৩ ১৯.৫/২০, এর বাইরে তেমন একটা পার্থক্য নেই ।

আর যদি আপনার পুরাতন মডেলের আইফোন থাকে যেমন আইফোন ৮ বা আইফোন এক্সআর, সে ক্ষেত্রে আপনি নিতে পারেন । পুরাতন মডেল গুলোর থেকে  আইফোন ১৩ তো অনেক এক্সাইটিং  নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছে সে কারণে আইফোন ১৩ তে আপডেট করতে পারেন, কোন সমস্যা নেই । 

বিশেষ করে এটা মনে রাখবেন,  আইফোন ১৩ তে ব্যাটারি লাইফটা আগেরগুলোর থেকে অনেক বেটার, প্রসেসর অনেক পাওয়ারফুল,  ক্যামেরার সফটওয়্যার আপডেট টাও মাথায় রাখার মত একটা বিষয় । এগুলো বিবেচনায় রাখলে আইফোন ১৩ নিতে পারেন । তবে দাম হিসেবে আইফোন ১২ থেকে ১৩ তে আপগ্রেড করার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না । এই দামে এন্ড্রয়েডের সবচাইতে ভালো ফোন পাবেন, যেটা স্পেসিফিকেশন হিসেবে আইফোন এর থেকে অনেক অনেক বেটার,  তবে যেটা বললাম ব্র্যান্ড ভ্যালুর দিক থেকে আইফোনের কোন বিকল্প নাই । আর ব্র্যান্ড ভ্যালু সবসময় অনেক costly. রোলেক্সের একটা ঘড়ি দিয়ে অনেক সময় আপনি পুরো একটা ঘড়ির দোকান কিনতে পারবেন!!