মেটা (Meta) – ফেসবুক কেন নাম পরিবর্তন করেছে

  • Post author:
  • Post category:Business
অক্টোবরের ২৮ তারিখ ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ তাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে ফেসবুক পরিচিত হবে মেটা (Meta) নামে । সবার মনে যেটা প্রশ্ন জাগছে, হঠাৎ করেই নাম পরিবর্তন কেন? ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ার নামও কি পরিবর্তন হবে? আজকের ব্লগে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব, চলুন শুরু করা যাক ।

ফেসবুক থেকা মেটা নামের কারণসমূহ

আমার মতে,  মোটা দাগে বললে ফেসবুক তিনটা কারণে নাম পরিবর্তন করেছে –

For better information, Watch our YouTube video.

মেটাভার্স

প্রথম কারণ হচ্ছে ফেসবুক শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে আবদ্ধ থাকতে চায় না । মার্ক জুকারবাগ এর এম্বিশন অনেক অনেক বড় । তার মতে সামনের যে সময় আসছে তা হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির যুগ, মানুষ তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কাটাবে, ফেসবুকের ‘মেটা’ এই ভার্চুয়াল ইন্ডাস্ট্রির মূল খেলোয়াড় হতে চাচ্ছে । মার্ক জুকারবার্গ এর মতে ইন্টারনেটের পরবর্তী যে সময় আসছে সেটা হবে মেটাভার্স, ঠিক যেমন ফেসবুক যখন শুরু হয়েছিল তার পরবর্তী সময় ছিল সোশ্যাল মিডিয়া । তার ধারণা, আগামী এক যুগের মধ্যে মেটাভার্স কোটি কোটি লোকের কাছে পৌছে যাবে, বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল ই-কমার্সের ব্যবসা হবে এবং লাখ লাখ ক্রিয়েটরস এবং ডেভেলপারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে । আগামী বছর ফেসবুকের মেটা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট রেখেছে শুধুমাত্র মেটাভার্সের জন্য যে টেকনোলজি গুলো প্রয়োজন তা উন্নয়ন করার জন্য । এই কারণেই ফেসবুক এখন মেটা

রি-ব্রান্ডিং

ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়ে বললে এখানে বেশ কিছু কারণ জড়িয়ে আছে । প্রথমে পজিটিভ গুলো বলে নেই, ফেসবুক কিন্তু এখন শুধু ফেসবুক না, ফেসবুক এখন অনেকগুলো কোম্পানির সমন্বয় । ইনস্টাগ্রাম,  হোয়াটসঅ্যাপ, Ocula-র মতো আরো বেশ কিছু কোম্পানি ফেসবুকের সাথে connected ।  তার পরেও সবাই ফেসবুক কে শুধু একটা প্রোডাক্ট এর নামে চিনে, যেটা মার্ক জুকারবার্গের একদম পছন্দ না । He said the name Facebook doesn’t fully encompass everything the company does now, and is still closely linked to one product. “But over time, I hope we are seen as a metaverse company.” জুকারবার্গ এর মতে,  তারা এমন একটা কোম্পানি হতে যাচ্ছে, যেখানে পুরো থ্রিডি অগমেন্ট রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ইন্টারনেট এর সমন্বয় ঘটবে । এরপরের কারণটা অবশ্যই নেগেটিভ, গত দু’বছরে বড় বেশ কয়েকটা কেলেঙ্কারি ফেসবুকের উপরে পড়েছে,  এখন পশ্চিমা বিশ্বে অনেককেই বা আমাদের দেশে অনেকেই যেটা জানে যে ফেসবুক একটা ডেটা কালেকশন কোম্পানি, যেটা আসলে কোনভাবেই মিথ্যা না ।

এত কেলেঙ্কারির পরেও লাস্ট কোয়ার্টারে ফেসবুক ৯৬১ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ করেছে

আমি একটু যোগ করতে চাই, আপনার লাইফের প্রায় সবকিছুই আপনি কিন্তু ফেসবুকের সাথে শেয়ার করছেন । সেটা সকালবেলা আপনার টবের গাছে নতুন ফল আসছে বা আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কোথায় বেড়াতে গিয়েছেন তারা আপডেটসহ । এটা প্রকাশের কিছুক্ষণ পর আপনি হয় গাছের বিজ এর এ্যাড দেখবেন, না হলে ভালো রিসোর্ট কোনগুলো আশেপাশে আছে সেগুলোর বিজ্ঞাপন দেখবেন । এমনকি আপনি যদি গুগলে কিছু খোঁজেন, যেটা ফেসবুকের সাথে ডাইরেক্টলি কানেক্ট না, কিছুক্ষণ পর আপনি তার বিজ্ঞাপনও ফেসবুকে দেখবেন । এটা কেন হচ্ছে? এর কারণ হচ্ছে আপনি নিজেকে যতটা না জানেন. ফেসবুক তার থেকে ভাল জানে যে আপনার জীবনের অ্যাক্টিভিটি আসলে কি হচ্ছে এবং আপনি ভবিষ্যতে কি করবেন এবং কোন ধরনের প্রোডাক্ট আপনি কিনতে চান । তাদের কাছে আপনার জীবনের জন্ম সাল থেকে সব ধরনের ডেটা আছে । এটা তারা জোর করে আপনার থেকে নেয়নি, বরং আপনি নিজের ইচ্ছাতেই সবকিছু তাদের দিয়ে রেখেছেন, টো ব্যবহার করে ফেসবুক বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে । এত কেলেঙ্কারির পরেও লাস্ট কোয়ার্টারে ফেসবুক ৯৬১ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ করেছে, ভাবা যায় । সর্বশেষ যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, ফেসবুকের সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সিস হগেন, হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে বিভিন্ন মিডিয়া, সিনেট কমিটি, ইউকে পার্লামেন্টে, ফেসবুকের যে সমস্যাগুলো তুলে ধরছে, এটা ফেসবুকের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনছে । এমনকি গত সেপ্টেম্বর মাসে আয়ারল্যান্ড ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ কে E.U.’s data privacy law  ভাঙ্গার জন্য ২৭০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে । সমস্যাগুলো থেকে কিছুটাও যদি ফেসবুকের ব্রান্ডিং রক্ষা করার কোন উপায় থেকে থাকতো সেটা হচ্ছে ফেসবুকের নাম পরিবর্তন করা এবং মার্ক জুকারবাগ ঠিক সেটাই করেছে । অন্য অনেক কারণের সাথে ফেসবুকের ব্রান্ডিং ভ্যালু বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক কে মেটা হিসেবে এখন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ।

প্যারেন্ট কোম্পানি

তিন নাম্বার কারণ যেটা আমার ব্যক্তিগত মত, গুগল যেমন অ্যালফাবেট তৈরি করেছে প্যারেন্ট কোম্পানি হিসেবে, ফেসবুক একই স্টাইলে একটা প্যারেন্ট কোম্পানি হিসেবে মেটা তৈরি করলো । এখন থেকে ফেসবুকের মালিক ফেসবুক না, ফেসবুকের মালিক হচ্ছে মেটা । অন্য কোম্পানিগুলোও ফেসবুক এর অধীনে না থেকে মেটা-র অধীনে থাকবে । এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে এখন থেকে ফেসবুক মেটা-র একটা product হিসেবে পরিচিত হবে । এর ফলে একটা ব্রান্ডের ক্ষতির জন্য অন্য সব ব্রান্ডের ক্ষতি হবে না ।

তাহলে কি ফেসবুক ওয়েবসাইটের নাম মেটা হবে?

আমার মনে হয় না ফেসবুকের নাম কখনো পরিবর্তন হবে । ওয়েবসাইটে সবসময় facebook.com এবং ফেসবুক-ই থাকবে  । মেটা, এটা থাকবে পর্দার আড়ালে । শেয়ার বাজার এবং কর্পোরেট সব কাগজপত্র আছে এগুলোতে । ইতিমধ্যেই ফেসবুক তার শেয়ারবাজারের স্টিকার পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়েছে, এটা FB থেকে MVRS হবে সামনের ডিসেম্বরে । এই কারণে চিন্তার কোন কারণ নেই যে, আপনার ফেসবুক কে কিছুদিন পর ‘মেয়েটা’ বা ‘মেটা’ বলতে হবে ।